লেখক: পিনাকী ভট্টাচার্য, প্রকাশনী: হরপ্পা ইউ কে, পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৪৮৮, মুদ্রিত মূল্য: ১০০০ টাকা, কোয়ালিটি: স্ট্যান্ডার্ড কোয়ালিটি, বাইন্ডিং: হার্ডকভার
লেখক: লে. কর্ণেল(অব.) শরিফুল হক ডালিম, পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৩৮৭, মুদ্রিত মূল্য: ৯০০ টাকা, কোয়ালিটি: প্রিমিয়াম কোয়ালিটি (জ্যাকেট কভারসহ), বাইন্ডিং: হার্ডকভার
লেখক: মতিউর রহমান রেন্টু, পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৫৬, মুদ্রিত মূল্য: ৫০০ টাকা, কোয়ালিটি: প্রিমিয়াম কোয়ালিটি (জ্যাকেট কভারসহ), বাইন্ডিং: হার্ডকভার
স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ
আপনি যদি বর্তমান সময়ের একজন পলিটিক্যাল কিংবা হিউম্যান রাইটস এক্টিভিটিস হন, জার্নালিস্ট হন, অথবা একজন সচেতন নাগরিক হন এবং আপনি কংক্রিট নলেজ অর্জন করতে চান, তাহলে "স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ" বইটি আপনার জন্যই লেখা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ের ইতিহাস ও সামাজিক পরিবর্তন নিয়ে " স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ" বইটি অসাধারণ একটি রচনা। লেখক অত্যন্ত দক্ষতার সাথে আমাদেরকে সেই সময়ের ঘটনাবলী, চ্যালেঞ্জ ও অর্জনের কাহিনী শুনিয়েছেন। এই বইটি পড়ার সময় মনে হয়েছে, আমি যেন সেই সময়ের বাংলাদেশে উপস্থিত আছি। বইটির প্রতিটি অধ্যায় গভীর গবেষণা এবং ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতে রচিত, যা পাঠককে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরবর্তী পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেয়। লেখকের ভাষা প্রাঞ্জল এবং সরল। ফলে পাঠক বইটি সহজেই পড়তে এবং বুঝতে পারেন। এছাড়াও, লেখক নানা তথ্যচিত্র, ছবি এবং সাক্ষাৎকার ব্যবহার করেছেন যা বইটির আকর্ষণকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে।
"স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ" শুধু একটি ইতিহাসের বই নয়, এটি আমাদের জাতীয় সত্ত্বা এবং অগ্রগতির প্রতিচ্ছবি। যারা বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে আগ্রহী, তাদের জন্য এই বইটি অবশ্যপাঠ্য। আমি অত্যন্ত সন্তুষ্ট এই বইটি পড়ে এবং অন্য সকলকে এটি পড়ার সুপারিশ করছি।
আমি মেজর ডালিম বলছি
স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেওয়া তো দূরের কথা। আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব ও শেখ মুজিব কখনোই চিন্তা করেননি সশস্ত্র সংগ্রামের কথা। তাই ছিল না তাদের কোনো পূর্বপ্রস্তুতি। তাদের পার্টি মেনিফেষ্টো, নির্বাচনী প্রচারণা এবং পরবর্তী সময়ে ইয়াহিয়া শাহীর সাথে তাদের রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা ও অন্যান্য কার্যক্রম থেকে এ সত্যই প্রমাণিত হয়। এ সত্যকে অস্বীকার করে আজ কোন অধিকারে প্রবাসে দলীয় অস্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠা করে স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের সকল কৃতিত্বের একচ্ছত্র দাবিদার হয়ে উঠলেন তারা? “মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে আওয়ামী লীগের মধ্যে ছিল দ্বিধা-দ্বন্দ্ব। অনেকেরই বক্তব্য ছিল আওয়ামী লীগ একাই মুক্তিযুদ্ধ করবে। অন্য কোনো দল বা গোষ্ঠি করুক তা হবে না।” (দৈনিক ইনকিলাবের সাথে জনাব শান্তিময় রায়ের সাক্ষাৎকার)
“আমার ফাঁসি চাই”
বইয়ের কিছু অংশ-
৩রা মে ১৯৮৪ এর এক পড়ন্ত বিকেলে ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে বসে গল্প করছেন বঙ্গবন্ধু কন্য জননেত্রী শেখ হাসিনা সহ কয়েকজন। গল্পে গল্পে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ও পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর প্রসঙ্গ উঠলো। প্রসঙ্গ উঠলো ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যে দিয়ে গড়ে উঠা আমাদের সেনাবাহিনীর কথা।
জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পর্কে বললেন, এটা একটা সেনা বাহিনী হলো ? এটা একটা বর্বর, নরপিশাচ, উচ্ছৃংখল, লোভী, বেয়াদপ বাহিনী। এই বাহিনীর আনুগত্য নেই , শৃংখলা নেই , মানবিকতা নেই, নেই দেশ প্রেম। এটা একটা দেশদ্রোহী অসভ্য হায়েনার বাহিনী। তোমরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কথা বল। সারা বিশ্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মতো এতো ভদ্র, নম্র, সভ্য, বিনয়ী এবং আনুগত্যশীল বাহিনী খঁজে পাওয়া যাবেনা। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মানবিকতা বোধের কোন তুলনাই চলেনা। কি অসম্ভব সভ্য আর নম্র তারা।
পচিশে মার্চ রাতে তারা ( পাকিস্তান আর্মি) এলো, এসে আব্বাকে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব) সেলুট করলো, মাকেও সেলুট করলো, আমাকেও সেলুট করলো। সেলুট করে তারা বলল, স্যার আমরা এসেছি শুধু আপনাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। অন্য কোন কিছুর জন্য নয়। আপনারা যখন খুশি যেখানে খুশি যেতে পারবেন। যে কেউ আপনার এখানে আসতে পারবে। আমরা শুধু আপনাদেন নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো। আপনারা বাইরে গেলে আপনাদের নিরাপত্তার জন্য আমরা আপনাদের সাথে যাবো। কেউ আপনাদের এখানে এলে আমারা তাকে ভালভাবে তল্লাশি করে তার পর তাকে এখানে ঢুকতে দিব। এসবই করা হবে আপনাদের নিরাপত্তার জন্য। সত্যিই পাকিস্তানী সেনাবাহিনী যা করেছে তা সম্পুর্ন আমাদের নিরাপত্তার জন্য করেছে।
২৬ শে মার্চ দুপুরে আব্বাকে (শেখ মুজিব) যখন পাকিস্তানী বাহিনী নিয়ে যায়, তখন জেঃ টিক্কা খান নিজে এসে আব্বাকে ও মাকে সেলুট দিয়ে আদবের সাথে দাড়িয়ে বলে, স্যার প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আলোচনার জন্য নিয়ে যেতে বলেছেন। আমি আপনাকে নিয়ে যেতে এসেছি। আপনাকে নেওয়ার জন্য বিশেষ বিমান তৈরি(স্পেশাল ফ্লাইট রেডি) আপনি তৈরি হয়ে নেন এবং আপনি ইচ্ছা করলে ম্যাডাম (বেগম মুজিব) সহ যে কাউকে সঙ্গে নিতে পারেন। আব্বা-মা’র সাথে আলোচনা করে একাই গেলেন। পাকিস্তান আর্মি যতদিন ডিউটি করেছে এসেই প্রথমে সেলুট দিয়েছে।
শুধু তাই নয়, আমার দাদীর সামান্য জ্বর হলে পাকিস্তানীরা হেলিকপ্টার করে টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকা পিজি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছে। জয় তখন আমার পেটে, আমাকে প্রতি সাপ্তাহে সি এম এইচ নিয়ে ওরা চেকআপ করাতো। জয় হওয়ার একমাস আগে আমাকে সি এম এইচ-এ ভর্তি করিয়েছে। ৭১ সালে জয় জন্ম হওয়ার পর পাকিস্তান আর্মিরা খুশিতে মিষ্টি বাটোয়ার করেছে এবং জয় হওযার সমস্ত খরচ পাকিস্তান আর্মিরাই বহন করেছে । আমরা যেখানে খুশি যেতে পারতাম। পাকিস্তানীরা দুটি জীপে করে আমাদের সাথে যেতো নিরাপত্তার জন্য আমাদের পাহারা দিতো।
আর বাংলাদেশের আর্মিরা! জানোয়ারের দল, অমানুষের দল এই অমানুষ জানোয়ারেরা আমার বাবা-মা, ভাই সবাইকে মেরেছে- এদের যেন ধ্বংশ হয়। (৫৩ ও ৫৪ পৃষ্টা)
(0) Rated Products